১ লিটার তেলে কত কিলোমিটার যায় প্রাইভেট কার
বাংলাদেশে প্রাইভেট কারের জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। একটি গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে জ্বালানি দক্ষতা বা মাইলেজ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, ১ লিটার তেলে একটি প্রাইভেট কার কত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভরশীল, যেমন – গাড়ির মডেল, ইঞ্জিনের ধরন, চালকের ড্রাইভিং অভ্যাস এবং রাস্তার অবস্থা। চলুন, এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

গাড়ির মাইলেজ কীসের উপর নির্ভর করে?
বাংলাদেশে টয়োটা, হোন্ডা, নিসান, হুন্ডাই, কিয়া-এর মতো ব্র্যান্ডের প্রাইভেট কার বেশ জনপ্রিয়। এই গাড়িগুলোর মাইলেজ সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর নির্ভর করে:
- ইঞ্জিনের আকার: সাধারণত ১০০০ থেকে ১৫০০ সিসির ইঞ্জিনের গাড়িগুলো বেশি মাইলেজ দেয়। উদাহরণস্বরূপ, টয়োটা করোলা বা হোন্ডা সিটির মতো গাড়ি শহরে প্রতি লিটার পেট্রোলে প্রায় ১২-১৫ কিলোমিটার এবং হাইওয়েতে ১৮-২২ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে।
- জ্বালানির ধরন: পেট্রোল, ডিজেল বা হাইব্রিড গাড়ির মাইলেজ ভিন্ন ভিন্ন হয়। হাইব্রিড গাড়ি, যেমন টয়োটা প্রিয়াস, প্রতি লিটারে ২০-২৬ কিলোমিটার বা তারও বেশি পথ অতিক্রম করতে পারে। ডিজেল ইঞ্জিন চালিত গাড়িগুলো সাধারণত পেট্রোল গাড়ির তুলনায় বেশি মাইলেজ দেয়।
- ড্রাইভিং অভ্যাস: আক্রমণাত্মকভাবে গাড়ি চালানো, ঘন ঘন ব্রেক করা এবং এয়ার কন্ডিশনার (এসি) ব্যবহার করলে মাইলেজ কমে যায়। শান্ত ও স্থির গতিতে গাড়ি চালালে জ্বালানি সাশ্রয় হয়।
- রাস্তার অবস্থা: ঢাকার মতো যানজটপূর্ণ শহরে গাড়ির মাইলেজ তুলনামূলকভাবে কমে যায়। অন্যদিকে, হাইওয়ের মসৃণ রাস্তায় গাড়ি অনেক বেশি পথ অতিক্রম করতে পারে।
বাংলাদেশে জনপ্রিয় কিছু গাড়ির মাইলেজ (প্রতি লিটারে)
এখানে বাংলাদেশের রাস্তায় চলাচলকারী জনপ্রিয় কিছু প্রাইভেট কারের গড় মাইলেজ তুলে ধরা হলো:
- টয়োটা করোলা (পেট্রোল): শহরে প্রায় ১২-১৪ কিলোমিটার এবং হাইওয়েতে ১৬-২০ কিলোমিটার। এর হাইব্রিড মডেলটি শহরে ১৮-২০ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইলেজ দিতে পারে।
- হোন্ডা সিটি (পেট্রোল): শহরে প্রায় ১২ কিলোমিটার এবং হাইওয়েতে ১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইলেজ পাওয়া যায়।
- টয়োটা প্রিয়াস (হাইব্রিড): হাইব্রিড প্রযুক্তির জন্য এই গাড়িটি জ্বালানি সাশ্রয়ের দিক থেকে এগিয়ে। শহরে এটি প্রতি লিটারে ২০-২৩ কিলোমিটার এবং হাইওয়েতে ২৫-২৮ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে।
- হুন্ডাই টুকসন (ডিজেল/পেট্রোল): এই গাড়ির ডিজেল সংস্করণটি শহরে প্রায় ১৪-১৬ কিলোমিটার এবং হাইওয়েতে ১৮-২২ কিলোমিটার মাইলেজ দেয়। তবে, টার্বোচার্জড পেট্রোল ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে শহরে মাইলেজ ৭ কিমি/লিটারের কাছাকাছি হতে পারে।
- নিসান এক্স-ট্রেইল (পেট্রোল/হাইব্রিড): পেট্রোল ইঞ্জিনে এই গাড়িটি শহরে প্রায় ৬-৮ কিলোমিটার মাইলেজ দেয়। তবে এর হাইব্রিড সংস্করণটি প্রায় ১৩-১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইলেজ দিতে সক্ষম।
কীভাবে গাড়ির মাইলেজ বাড়ানো যায়?
কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে গাড়ির জ্বালানি খরচ অনেকটাই কমানো সম্ভব। নিচে কিছু কার্যকরী টিপস দেওয়া হলো:
- নিয়মিত সার্ভিসিং: গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল, এয়ার ফিল্টার এবং টায়ারের প্রেশার নিয়মিত পরীক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণ করুন।
- মসৃণ ড্রাইভিং: হঠাৎ করে গতি বাড়ানো বা কমানো থেকে বিরত থাকুন। একটি নির্দিষ্ট গতিতে গাড়ি চালানোর অভ্যাস করুন।
- এসির ব্যবহার কমানো: অপ্রয়োজনে এয়ার কন্ডিশনার (এসি) বন্ধ রাখলে জ্বালানি সাশ্রয় হয়। এসি চালালে মাইলেজ প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত ওজন পরিহার: গাড়িতে অপ্রয়োজনীয় ভারী জিনিসপত্র বহন করলে ইঞ্জিনের উপর চাপ পড়ে এবং তেল খরচ বেড়ে যায়।
- ভালো মানের জ্বালানি: নির্ভরযোগ্য ফিলিং স্টেশন থেকে ভালো মানের জ্বালানি ব্যবহার করুন।
জ্বালানি দক্ষতার গুরুত্ব
বাংলাদেশে জ্বালানির দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই একটি জ্বালানি-সাশ্রয়ী গাড়ি কেনা দীর্ঘমেয়াদে আপনার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে। বিশেষ করে ঢাকা শহরের মতো যানজটপূর্ণ পরিবেশে হাইব্রিড বা ছোট ইঞ্জিনের গাড়ি চালানো অধিক সাশ্রয়ী।
পরিশেষে বলা যায়, ১ লিটার তেলে একটি প্রাইভেট কারের মাইলেজ একাধিক বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। গড়ে, বাংলাদেশে একটি প্রাইভেট কার শহরে ১০-১৫ কিলোমিটার এবং হাইওয়েতে ১৫-২৫ কিলোমিটার মাইলেজ দিয়ে থাকে। গাড়ি কেনার পূর্বে এর মাইলেজ, জ্বালানির ধরন এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।